প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে
ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ তন্ত্রের পতনের পর ছাত্র-জনতার দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেন বাংলাদেশের একমাত্র নোভেল বিজয়ী ব্যাক্তি ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর হতেই বাংলাদেশ কে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের দোসর শক্তি গুলো। নানা রুপে, নানান ইস্যুতে প্রতিদিনই উত্তপ্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে গনতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ধাবিত হওয়া আগামীর বাংলাদেশের সামনে। এই সব ষড়যন্ত্রের কারন সম্পর্কে না বুজে আমরা যদি প্রতিকারের চিন্তা করি তাহলে ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে অর্জিত ২৪ শের স্বাধীনতার স্বাদ নিমিষেই বিষাধে রুপান্তরিত হতে পারে।
প্রথমেই জানা দরকার কেন এই ষড়যন্ত্র? কারা এই ষড়যন্ত্রের দোসর?
নিউটনের তৃতীয় সূত্র মোতাবেক প্রত্যেক ক্রিয়ারই বিপরীত সমান প্রতিক্রিয়া আছে, হউক সেই ক্রিয়া ভাল অথবা মন্দ। স্বৈরাচারের উপাধিতে ভূষিত হওয়া বিগত সরকারের পতন কিন্তু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হয় নি, বিগত ১৫ বছর তারা যে ফ্যাসিবাদের মঞ্চ তৈরি করেছিল তা কিন্তু শেখ হাসিনার একার কৃতিত্ব নয়। দেশী বিদেশি অনেক শক্তিই এই মঞ্চের কাঠামো তৈরিতে সহযোগী অথবা দোসর হয়ে ভূমিকা পালন করেছে। অতএব এই নিদারুণ পরাজয় শুধু হাসিনার নয় তার দোসরদের ও তাই তারা প্রতিবিপ্লবের প্রতিক্রিয়া দেখাবে এটা খুব স্বাভাবিক।
আমাদের মনে রাখতে হবে ফ্যাসিবাদের উত্থান একদিনে হয় নি এবং শেখ হাসিনার একক প্রচেষ্টায়ও হয় নি। শেখ হাসিনা তার এই ফ্যাসিবাদ কে ১৫ বছর পর্যন্ত টেনে আনতে দেশের সকল সাংবিধানিক কাঠামো, আইন, বিচার ও প্রশাসন কে হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করেছে। এই সব সেক্টরের সকল কর্তাব্যক্তিই কিন্তু অর্থে বিত্তে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে, তারা সকলে কিন্তু পালিয়ে যায় নি অথবা যেতে পারেনি। এখনো সকল সেক্টরে ৮০% এর অধিক হাসিনার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।
ভোটের হিসাবে বাংলাদেশে প্রায় ৩৫% লোক আওয়ামীলীগ করে, ধরে নিলাম তাদের স্বৈরাচারী শোষণ এর কারনে এই হিসাব ৩০% এ নেমে এসেছে, আগস্টের ৫ তারিখের পর ৫% লোক দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে হয়ত, বাকী ২৫% আওয়ামী লীগ কি বিতাড়িত হয়েছে অথবা হবে?
হাসিনার ফ্যাসিবাদের আন্তর্জাতিক দোসর ছিল ভারত, শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য যাদের হাসিনা নিজের শাড়ি ছাড়া সব কিছুই দিয়েছে। হাসিনা দেশ হতে পালিয়ে যাওয়ার পর এই ভারতই কিন্তু আশ্রয় দিয়েছে, বিষয় টা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। হাসিনা স্বৈরাচার, খুনি যাই হউক না কেন তা ভারতের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। বাংলাদেশের বিপ্লবী জনতা পলাতক হাসিনাকে খুনি, স্বৈরাচার মনে করলেও ভারত হাসিনা কে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান মন্ত্রি এবং পরম ও চরম বান্ধবী মনে করে। যদি বিষয় টা এভাবে বলি হাসিনা ভারতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেই বাংলাদেশ কে শোষন করেছে তাহলেও ভুল বলা হবে না।
ভারতের সাথে হাসিনার অসংখ্য হিসাব নিকাশ ছিল যা বাংলাদেশের জনগনের সাথে নয়। তাই ভারত চাইবে যে কোন মূল্যে হাসিনাকে পূনরায় বাংলাদেশ পূনর্বাসন করতে। আর পূনর্বাসনের প্রক্রিয়া টা যে সহজ নয় তা ভারত জানে, ভারত সহ ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রথম পরিকল্পনা দেশকে অস্থিতিশীল করে জনগনকে হাসিনার গুরুত্ব বুজিয়ে ইউনুস সরকারকে বিতর্কিত করা। ভারতের কাছে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার সবছেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রাম্প কার্ড জাতিগত বৈষম্য বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা যে কার্ড ব্যাবহার করে বিরোধী দলগুলোকে ভারতের পরামর্শে বিগত ১৫ বছর কোনঠাসা করে রেখেছিল হাসিনা সরকার।
দ্বিতীয় পরিকল্পনা ১/১১ এর পেক্ষাপট তৈরি করে সেনাবাহিনী কে বিপ্লবী জনতার মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়া।
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই মূলত বিভিন্ন ইস্যু তে সরব ভূমিকা রাখছে ভারত সহ পরাজিত অপশক্তি গুলো। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ইস্যু হচ্ছে ইসকন, এই ইসকন কে বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের ট্রেনিং দিয়েছিল হাসিনা। ইসকন গুরু বা প্রভুদের বক্তৃতা বিবৃতি গুলো শুনলেই বুজা যায় তারা কতটা হাসিনার অনুগত।
গত রবিবার ইসকন গুরু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপতার পরবর্তী, জয় শ্রী রাম বলে চট্রগ্রাম আদালতে হামলা, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলিফ কে হত্যা, মসজিদ ভাংচুর, বিভিন্ন এলাকায় ভারতের বিতর্কিত জয় শ্রী রামের শ্লোগান দিয়ে মিছিল, একজন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামী নিয়ে ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপ ইত্যাদি বিষয় গুলো নিয়ে খুব ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে ভাবতে হবে এবং করনীয় ঠিক করতে হবে।
না হলে এই ইস্যুতেই লন্ড ভন্ড হতে পারে বিপ্লবীদের সপ্ন।
মনে রাখতে হবে ১৬ বছরের স্বৈরাচার, ৩ মাস বা ৩ বছরে বিলুপ্ত হবে না। তাই আমাদের সকল ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে, সকলে মিলেমিশে ঠান্ডা মাথায় ঘটনার ভূত-ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ করে ফ্যাসিস্ট শক্তি গুলোকে মোকাবিলা করে সপ্নের বৈষম্যহীন গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মানে এগিয়ে যেতে হবে।